সমাজের সর্বত্র পজিটিভ চিন্তা বা বিষয়ের থেকে নেগেটিভ বা নেতিবাচক বিষয়গুলো অনেক বেশী প্রকট। আর তাই প্রতিটি স্তরেই নেগেটিভ চিন্তা স্বাভাবিক পজিটিভ জীবনকে দূর্বিসহ করে তোলে। তাই নেগেটিভ চিন্তা, মানুষ এবং ঘটনা থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে ধীরে ধীরে অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদির জন্ম হয়। আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরে দিনের পর দিন নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকলে। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, চিন্তা করার প্রক্রিয়া, কর্মজীবন, এমনকি সৃজনশীলতাকেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নেতিবাচক চিন্তাগুলো যেন আমাদের এগোতেই দিতে চায় না। দম বন্ধ করা অস্বস্তিকর এসব ভাবনা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনভাবে অনুসরণ করতে হবে নিম্নোক্ত কিছু কৌশল। নেতিবাচকতা থেকে বেরিয়ে আসতে দরকার ইচ্ছাশক্তি। কাজ করতে হবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। নিজের চিন্তাশক্তি ভালো কাজে লাগাতে হবে। তাহলে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারবে না।
১. মনোযোগের চর্চা- অস্থির সময়ে দুশ্চিন্তা যখন গ্রাস করে নিজেকে তখন সবকিছু থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। কোনো শান্ত পরিবেশে মনোযোগের চর্চা করুন। ইতিবাচক স্থান, বিষয় বা দৃশ্য কল্পনা করে সেটাতে মনোযোগ একীভূত করুন।
২. ভাবনার গতি বন্ধ না করা- জীবনে চলমান সমস্যা, মন খারাপ, রাগ, নেতিবাচক সব অনুভূতি থেকে দূরে পালানোর অর্থ এই নয় যে বিষয়টির অস্তিত্ব শেষ বরং বিষয়টিকে বেশি পাত্তা দেওয়া হয়। নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসলে জোর করে দূরে সরিয়ে ভাবনার গতি বন্ধ করবেন না, তাকে আসতে দিন। খুঁটিনাটি দেখতে থাকুন, ভাবতে থাকুন।
৩. ভাবনার প্রতিস্থাপন- একটি ভাবনাকে অন্য ভাবনা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায়। যখনই কোনো নেতিবাচক চিন্তা কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ ফেলবে, তখনই চলমান সময়ের ভালো কোনো দিক নিয়ে ভাবুন। বিষয়টির মাঝে ভালো কোনো দিক আছে কি না তা নিয়ে ভাবুন।
৪. গঠনমূলক সমালোচনা- অহেতুক নিন্দা বা প্রশংসা দুটোই মানুষকে যথাযথ সত্য থেকে দূরে রাখে। তাই প্রয়োজন গঠনমূলক সমালোচনার। নিন্দা শুনলে নিজেকে অযোগ্য মনে হয় বা প্রশংসায় নিজের যোগ্যতা নিয়ে মনে অহংকার আসে। – এ কারণে নিজেকে এবং অন্যকেও সঠিক সমালোচনার মাধ্যমে বাস্তবের কাছাকাছি রাখা সম্ভব। এতে করে নেতিবাচক চিন্তা থেকেও দূরে থাকা যায়।
৫. যুক্তি দিয়ে ভাবা- কোনো বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষের চিন্তা-ভাবনায় যুক্তি ও আবেগ, দুটোরই আধিপত্য থাকতে হয়। আবেগ প্রায়শঃই আমাদের এতটা কাবু করে যে মানসিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল হয়ে যাই।
৬। নেগেটিভ আলোচনা থেকে কৌশলে দূরে থাকুন।
৭। নেগেটিভ মানুষেরা সর্বদা অসংলগ্ন হয়। অন্যদের পক্ষ হতে মন্তব্য ও সমর্থন নিয়ে, তারা যেন নিজেদের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা ও আলোচনায় অন্যদেরকেও জড়িয়ে নিতে চায়। তাই অসংলগ্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
৮। সমস্যা চিন্তা না করে, সমাধান চিন্তা করুন। নেগেটিভ একটি পরিস্থিতি হতে বেরিয়ে আসার ‘উপায় চিন্তা করার সময়’ আপনার মধ্যে একটি পজিটিভ মনোভাব তৈরি হয় যা আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে। যখনই নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনাকে তাড়া করবে, খাতা-কলম নিয়ে বসে যান। লিখতে শুরু করুন। বই পড়তে পারেন, সৃষ্টিশীল কিছু ভাবুন।
৯। আপনার সুখী থাকা, আপনার নিজের হাতে- যেদিন হতে আপনি অন্য মানুষদের মন্তব্য হতে নিজেকে যাচাই করা শুরু করবেন, ঠিক সেদিন হতেই আপনি নিজের সুখের চাবি অন্যদের হাতে সঁপে দিবেন। যেহেতু অন্যদেরকে পরিবর্তনের ক্ষমতা আপনার নেই, সেহেতু তাদের মাপকাঠিতে নিজেকে তুলনা করে হতাশাগ্রস্থ হওয়া বোকার কাজ! নিজেকে নেগেটিভ বিষয় হতে দূরে রাখুন। নিজের সুখের মানদণ্ড নিজের মত করে গড়ে তুলুন। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। নিজের প্রতিদিনের ছোটখাটো অর্জনগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
১০। চিন্তাগুলো শেয়ার করুন- জীবনের সব চিন্তা-দুশ্চিন্তা মানুষ নিজে নিজে সামলাতে পারে না। অপ্রীতিকর কোন পরিস্থিতি হতে বের হওয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ কী করা উচিত বা গতানুগতিক চিন্তার থেকে ব্যতিক্রম দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারবে সেই পরিস্থিতির বাইরে থাকা’ মানুষ। কেননা, আপনার মস্তিষ্ক ইতোমধ্যে ঘোর চিন্তায় মগ্ন। সমাধানের জন্য আলাদা করে চিন্তা করার কাজটি মস্তিষ্ক ঠিকভাবে করতে পারে না। তাই নির্ভরযোগ্য কোন বন্ধু, সহকর্মী কিংবা খুব কাছের মানুষের সাথে আপনার সমস্যাটি শেয়ার করুন এবং সাহায্য নিন। সমাধান চিন্তা করার ধারাবাহিকতা বদলাতে এটা খুব জরুরী ও কার্যকরী একটি উপায়।
নিজের বন্ধুর সঙ্গে বা তার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা শেয়ার করতে না পারেন তবে নিজেই নিজের বন্ধু হয়ে যান এবং এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
শরীরের সঙ্গে মনের যোগ রয়েছে। অতীতে কী হল না বা কেন হল না, তা ভেবে মনকে কষ্ট দেওয়ার কোনও মানে নেই। পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন।
নেতিবাচক চিন্তা দিয়ে কখনো নিজেকে গ্রাস হতে দেবেন না। ভয়কে জয় করুন এবং ভালো বা খারাপ, যেকোনো অবস্থার মুখোমুখি হোন। আর বারবার নেতিবাচক চিন্তা করলে কিন্তু ছোট্ট সমস্যাও কঠিন হয়ে উঠবে। তাই নেতিবাচক চিন্তার পাহাড় গড়বেন না।
নেতিবাচক চিন্তা এলে ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে মনকে অটোসাজেশন দিন। যেমন : ‘আমি পারব’, ‘আমি জয়ী হব’, ‘সব সমস্যার সমাধান হবে’ ইত্যাদি কথা নিজের মনকে বলতে থাকুন। এ ছাড়া নেতিবাচক চিন্তা কমাতে ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ইত্যাদি করতে পারেন।
চর্চার মাধ্যমে যেকোনো অভ্যাস গড়ে তোলাও যায়, আবার বদভ্যাস বাদও দেওয়া যায়।