এটিটিউট দুই রকমের হয়। একটি উইনার এটিটিউট অন্যটি লুজারস এটিটিউট। যখন স্টিভ জবস ও তার টিম আইফোন তৈরি করছিলেন তখন তারা একটি মোবাইল তৈরি করে। যা সাইজে একটু বড় ছিল। এটা দেখার পর স্টিভ জবস বলেন, এটাকে আরো ছোটো ও পাতলা করতে। কিন্তু টিমের সবাই বলে তারা এই মোবাইলকে এর থেকে পাতলা করতে পারবে না। পরে স্টিভ জবস পাশে থাকা একটি একুরিয়ামে মোবাইলটি ফেলে দেয়। আর সেখান থেকে কিছু বুদ বুদ বের হয়ে আসে। এরপর স্টিভ জবস তার টিমকে বলে যদি এই ফোনে বাতাসের জন্য জায়গা থাকতে পারে তার অর্থ হলো আমরা একে আরো পাতলা করতে পারি। এটাই হলো উইনার এটিটিউট। আর এটা জন্ম থেকে আসে না। এটাকে নিজের মধ্যে ডেভেলপ করতে হয়, অর্জন করতে হয়। উইনিং এটিটিউট মানুষকে এমন শক্তি দেয় যার ফলে মানুষ এই পৃথিবীটাকে আলাদা ডিরেকশনে দেখতে পায়। তাই যাদের মধ্যে এই এটিটিউট রয়েছে তারা সব সময় সমস্যার মধ্যে সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করেন।
উইনার এটিটিউটের মানুষগুলো সবকিছু আলাদা চোখে দেখে। তাই যেখানে সবাই সমস্যা দেখতে পায়, সেখানে এরা অপারচুনিটি খুঁজে পায়। একটি লোক ছিল যে কথা বলতে গিয়ে আটকে যেতো। তার স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। কিন্তু তার কথা আটকে যাওয়ার কারণে সে কোথাও কাজ পায়নি। কিন্তু নিজের জেদ ছিলো। তাই হার মানেননি। এরপর তিনি একটি নিজের শো তৈরি করেন। যেখানে একটি কথা না বলেও কেবল নিজের বডি ল্যাংগুয়েজ ও তার কাজ দিয়ে লোকদের হাসাতেন। শো টি সুপারহিট হয়। আর লোকে তাকে খুব পছন্দ করা শুরু করে। তিনি আর কেউ নন, মিঃ বিন। যদি নিজের দুর্বলতার কারণে তিনি হার মেনে চুপ করে থাকতেন তাহলে কি তিনি এই স্থানে আসতে পারতো? এই পৃথিবী কি তাকে চিনতো? কখনোই না।
সমস্যা সবার জীবনে আছে। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন এই সমস্যা থাকবেই। কিন্তু এই সমস্যাকে আপনি কিভাবে দেখবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করে। তাই পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, সেখানে ভালো কিছু খোঁজার চেষ্টা করুন। কারণ সমস্যা কখনো একা আসে না। এর সাথে অনেক অপারচুনিটি নিয়ে আসে। কিন্তু আমাদের ফোকাস সমস্যার দিকে এতো বেশি হয় যে আমরা সেই অপারচুনিটিকে দেখতে পাই না। মনে রাখতে হবে এই পৃথিবী শুধু সেই মানুষগুলোকেই মনে রাখে যারা তাদের সমস্যার সাথে লড়াই করে একটা কিছু করে দেখায়। যেখানে আমরা একবার হেরে গেলে হার মেনে নিই, সেখানে জ্যাক মা কে ৩০ বার ইন্টারভিউতে রিজেক্ট করে দেয়া হয়। আর সেটাও ছিল একটি ওয়েটারের চাকরি। কিন্তু তার এটিটিউট তাকে হার মানতে দেয়নি। আর তিনি প্রতিটি ফেলিউরকে আলাদাভাবে দেখেছেন। সেখান থেকে শিখেছেন। আর যাকে একদিন ওয়েটারের পদ থেকে রিজেক্ট করে দেয়া হয় সেই লোকটিই আজ চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। এটাই হলো এটিটিউটের পাওয়ার।
একটি কথা মনে রাখতে হবে ভুল তার সাথেই হয় যে চেষ্টা করে। আর এদের ভুলগুলোকে কেবল তারাই খোঁজে যারা নিজে কিছু করে না। তাই আপনার চিন্তা আপনার এটিটিউট এতোটা পজেটিভ রাখুন যা আপনার জীবনে যতবড় সমস্যাই আসুক না কেন আপনি তার মোকাবেলা করতে পারবেন। ফেলিউরকে একসেপ্ট করা শিখতে হবে। কারণ ফেল সবাই হয়। আজ যে সফল সে কখনো না কখনো ফেল হয়েছিলো। থমাস আলফা এডিসন বাল্ব আবিস্কার করার আগে ১০ হাজারবার ফেল হয়েছিলেন। আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লি্কংন প্রেসিডেন্ট হবার আগে ১২ বার নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। যদি এরা দু’একবার চেষ্টার পর থেমে যেতেন তবে আজ তাদেরকে কেউ চিনতো না। তাই ফেলিউরকে ভয় পাবেন না। এখান থেকে শিখুন। শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ ফেল হবার ভয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করে না। আর কেবল ১ ভাগ মানুষ এমন আছে যারা ফেল হবার পরও চেষ্টা করতে থাকে। ফেল হওয়াটা খারাপ কিছু নয়। ফেলিউর এর সাথে লড়াই করে সফল হওয়ার চেষ্টা করতে হয়। তাই নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৯৯ ভাগ মানুষের মতো হতে চাই নাকি ১ ভাগ লোকের মতো।
একটি গল্প দিয়ে এটিটিউটকে ব্যাখ্যা করা যায়। একটি গ্রামে এক লোক ছিল। সে অনেক বেশি মদ্যপান করতো। তার দুটি ছেলে ছিলো। যারা রোজ তার বাবাকে মদপান করতে দেখতো। ১০ বছর পর প্রথম ছেলেটি তার বাবার মতোই মদপান করতে শুরু করলো। আর অপর ছেলেটি বড় অফিসার হয়ে যায়। যখন দুজনকেই তাদের এই অবস্থার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন তারা দুজনেই বলেন, আজ আমি যাই কিছু সেটা আমার বাবার কারণে। এখানে সমস্যা দুজনের একই ছিল। কিন্তু তাদের এটিটিউট দুজনকে আলাদা করেছে। সমস্যা ছিল একই, কিন্তু এটিটিউট তাদের ভিন্ন। এটা ভাবতে হবে।
সৎ হবেন কিন্তু কখনো কষ্ট পেতে দিবেন না নিজেকে। বিশ্বাস করুন কিন্তু কখনো বোকা হবেন না। অন্যের কথাকে শুনুন কিন্তু নিজের কথাকে চেপে রাখবেন না। আপনার ভালো হওয়াকে এই পৃথিবী আপনাকে বোকা মনে করে। আর নিজেকে ততটাই বোকা তৈরি করুন যেন আপনি কাউকে ক্ষতি না করেন। আর নিজেকে এতটা চালাক রাখুন যাতে লোক আপনার ক্ষতি না করতে পারে। কেউ যখন ভুল করে বা খারাপ ব্যবহার করে তখন আমরা সেটাকে ইগনোর করে দিই। কিন্তু যদি আমরা প্রথম ভুল করার সাথে সাথে তাকে সিরিয়াসলি যদি এটা বলি, যেন এই ভুল আর না হয় তাহলে সে আর সেই ভুলটি কখনোই করবে না। তাই নিজেকে কখনো অন্যের চালাকির শিকার হতে দেবেন না।
এমন কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলতে চাইবেন না, যে নিজে থেকে আপনার সাথে কথা বলতে চায় না। কারো সাথে একবার কথা বলেই আপনি বুঝতে পারবেন কে আপনার সাথে কথা বলতে চায় কিনা। আর কেউ আপনাকে রিকুয়েস্ট না করলে কখনো কাউকে পরামর্শ দেওয়া উচিত নয়। এমন করলে সামনের জন সেই কথাটির কোনো মুল্য দেবে না। যা তার জন্য ভালো। তাই নিজের মূল্যকে বুঝুন। আর কারো সাথে ফালতু কথা বলার চেয়ে ভালো হলো নিজের জীবনকে উপভোগ করা। কেবল তাদের সাথেই কথা বলুন যারা আপনার সাথে কথা বলার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে এবং আপনার সাথে কথা বলে খুশিতে থাকে।
বিশ্বাসের উপর পৃথিবী চলে। আপনার বিশ্বাস আপনাকে বাঁচিয়ে রাখে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখা পাখির থেকে শেখা উচিত। পাখিরা যখন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে তার মুখে কোনো খাবার থাকে না। কিন্তু এই বিশ্বাস তার মনে থাকে যো, কাল সে খাবার পেয়ে যাবে। তাই নিজের মধ্যে পজিটিভ চিন্তা রাখা যে, আমি পারবো। হয়তো কিছু সময় লাগবে কিন্তু আমি আমার স্বপ্নকে সত্যি করে দেখাবো।
নিজের স্বভাব প্রদীপের মতো করা। যে বাদশার মহলেও ঠিক ততটাই আলো দেয় যতটা একটা গরিবের ঘরে দেয়। না কখনো কারো কাছে স্পেশাল হবেন, না কখনো কারোকে আপনার জীবনে স্পেশাল তৈরি করবেন। কিছু স্পেশাল বন্ধু রাখা যাবে। যাদের সাথে মনের কথা শেয়ার করা যায়। যখন কাউকে স্পেশাল তৈরি করবো তার সবকিছু আপনার জীবনে খুশির উপর প্রভাব ফেলবে। এছাড়া আপনি কারো কাছে স্পেশাল হলে তার সামান্য পরিবর্তন সামান্য অবহেলা আপনাকে কস্ট দিতে পারে।
ঝগড়া, মারামারি থেকে দূরে থাকা। তর্ক করা থেকে দূরে থাকুন। মানুষের কথা বলা বলে দেয় সে কেমন। আর কারো তর্ক বলে দেয় তার জ্ঞান কতটা। আপনি তার উপর রাগ করবেন, তাকে খারাপ কিছু বলবেন তারপর সেউ কিছু খারাপ বলবে আর এতে দুজনেরই মূল্য কমে যাবে। চিৎকার করলে কেবল ভিড় বাড়বে, লোক মজা নেবে, আর চলে যাবে। কিন্তু যদি কাউকে ভালোবেসে তার ভুলটা বোঝান সে আপনাকে ভালোই বলবে। এছাড়া তর্ক থেকে কোনো কিছু প্রমাণ করা যায় না। কিন্তু কথা বলে এটা প্রমান করা যায় যে কোনটা সঠিক। আর তর্কে এটা প্রমাণ হয়- যে কে সঠিক। পজিটিভ এটিটিউট এই পৃথিবীতে আপনাকে সবার সামনে ভালোবাসার মানুষ তৈরি করবে।