নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই হোন : কামরান চৌধুরী

জীবনের প্রতিটি স্তরে মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা শব্দটি অনেক শুনতে হয়। ছাত্রজীবন, কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবন উন্নয়নের বিষয়ে অনেক মোটিভেশনাল বই লেখা হয়েছে, স্পিকার বক্তব্য দিয়েছে। আমরা সেগুলো শুনি, কিছু সময় উদ্দীপ্ত থাকি, আবার কথাগুলো ভুলে যাই, স্বাভাবিক পূর্বের জীবন যাপন। এই চক্র ক্রমান্বয়ে চলতে থাকে। এই চক্রকে ভেঙে ফেলতে পারলেই, নিজের মধ্যে কিছু করার ক্ষুধা জাগ্রত করতে পারলেই মোটিভেশন কাজ করে।

          মানব চরিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায় নিজের মোটিভেশন নিজের কাছেই। ব্যক্তিগত জীবনে আপনি যাতে অনুপ্রাণীত হবেন তাই আপনার কর্মজীবনকে প্রভাবিত করবে। মোটিভেশন কর্মশালা, বই বা ভিডিও ক্লিপ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবেন ঠিকই কিন্তু তা কিছু সময়ের জন্য আপনাকে উদ্দীপ্ত করবে তারপর ক্রমান্বয়ে থিতিয়ে পড়বে। যতক্ষণ আপনি নিজেকে অনুপ্রাণিত না করবেন অর্থাৎ সেলফ মোটিভেটেড না হবেন ততক্ষণ ব্যক্তি উন্নয়নে কোন কাজ হবে না।  

  • সমস্যা ছাড়া মানুষ হয় না। সমস্যায় পড়লে হতাশা বা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়া সমাধানের পথ নয়। সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজুন। প্রতিটি কাজের মাঝে আনন্দ খুঁজুন। লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাস্তবায়নে ক্রমাগত সচেষ্ট থাকুন, ছোট ছোট পরিকল্পনা করে এগিয়ে যান, দিনশেষে বিজয় সুনিশ্চিত।
  • নিজের মনকে আয়ত্বে রাখুন যাতে অন্যকেউ সেটা চালাতে না পারে। নিজের স্বপ্নকে, লক্ষকে গুরুত্ব দিন, সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন। খারাপ চিন্তা, খারাপ নেশাগুলোকে দূরে সরিয়ে রাখুন। অন্য মানুষকে গুরুত্ব দিবেন কিন্তু নিজেকে গুরুত্বহীন করে নয়। মানুষকে উপকার করলে অবশ্যই স্রষ্টা সেটা আপনাকে ফিরিয়ে দিবেন বহুগুণে। তাই মানুষকে কথা দিয়ে, সৎ পরামর্শ দিয়ে, সামর্থমতো অর্থ দিয়ে, শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করুন। অন্যরাও আপনার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথে সহযোগিতা করবে।  
  • নিজেকে সম্মান করতে হবে। নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করে ছোট করবেন না। নিজের অর্জনগুলো ভাবুন। প্রতিনিয়ত নিজেকে অতিক্রম করার চেষ্টা করুন, নিজের সেরাটা দেয়ার কথা ভাবুন। কষ্ট আপনি করচেন ফলও আপনি অবশ্যই পাবেন।
  • ইতিবাচক ভাবতে হবে। ইতিবাচক ও প্রগতিশীল মানুষদের সংস্পর্শে আসতে হবে, তাদের সাথে কথা বলুন, সময় কাটান। নেতিবাচক মানুষদের থেকে দূরে থাকুন।
  • সফল ব্যক্তিদের জীবনী দেখুন, পড়ুন, ভাবুন। তাদের সম্পর্কে জানুন, তাদের দেয়া উক্তিগুলো পড়ুন। দু’চারটি উক্তি দৃষ্টির সামনেই রাখুন, অন্তরে গেথে রাখুন। যখনই তা দেখবেন আপনাকে উদ্দীপ্ত হতে সাহায্য করবে।
  • মানুষ সমালোচনার উর্ধে নয়। তাই সমালোচনাকে কখনোই ভয় পাবেন না। এতে উদ্ভাবনী সৃজনী চিন্তাশক্তির অপচয় হয়। বিবেককে প্রশ্ন করুন আপনি যা করছেন তা সঠিক কিনা। সমালোচনাকে ইতিবাচক ভেবে চিন্তাকে প্রসারিত করুন। নিজের মাঝে যদি নেগেটিভ কিছু থেকেও থাকে আত্মউন্নয়নের মাধ্যমে সেটাকে দূর করতে সচেষ্ট হোন।
  • শুধু কাজ, কাজ আর কাজ নয়। নিজের জন্য একান্ত কিছু সময় রাখুন। পরিবারকে সময় দিন, প্রিয় লোকদের সাথে ঘুরতে যান, যা কিছু ভালো তার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। ভালো ভালো গান শুনুন যা আপনার মন ও মস্তিষ্ককে প্রশান্তি দিবে। জীবনকে ভালোবাসুন দেখবেন এ ভালোবাসাই আপনাকে সেলফ মোটিভেটেড হতে সাহায্য করবে।
    • প্রতিটি মানুষের মাঝে রয়েছে সুপ্ত প্রতিভা। এই প্রতিভাকে জাগ্রত করতে পারলেই মানুষ সফলতা অর্জন করতে পারে। চারপাশের মানুষগুলো নিন্দা করতে বেশি ভালোবাসে। যে নিজে কিছু করে না কিন্তু অন্যকে ডিমোটিভেটেড করে চলে নিরন্তর। যদি আপনি এই নিন্দা বা সমালোচনাকে পজেটিভ ভাবে গ্রহণ করেন তবে মনে হবে সেই ব্যক্তিটি আপনার এবং আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি মোটিভেটেড পারসন। যখন তারা বলে, তোমার দ্বারা এই কাজটি হবেনা তখন বুঝবেন আপনি সঠিক পথে রয়েছেন। ভাবুন সে পজেটিভ ভাবে বলছে নাকি নেগেটিভ ভাবে বলছে। কেউ হয়তো চায় না আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হোক। আপনি তার উপরে উঠে যান, প্রতিষ্ঠিত হোন। আবার কেউ নিঃস্বার্থভাবে সমালোচনা করে আপনাকে সঠিক পথে থাকার নির্দেশনা দিচ্ছে। যখনই আপনি বিষয়টি বুঝতে পারেন তখন আপনার মধ্যে সেই মোটিভেশন সৃষ্টি হয়। তাই যে আপনার নিন্দা করে সেটাকে নিন্দা হিসেবে না নিয়ে মোটিভেশন হিসেবে নেওয়া উচিত।
  • মোটিভেটেড হওয়ার পর প্রাকটিস করতে হবে মোটিভেটেড থাকার জন্য।  চেষ্টা করুন মানুষের কথায় কান না দিয়ে নিজ উদ্যোগে কিছু করার। মনের মাঝে জেদ আনুন, আগুন জ্বালান, তাওয়া গরম না হলে রুটি সেঁকা যায় না। নিজের মধ্যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জেদ না আনলে, একাগ্র না হলে কখনোই আপনি কোনো কাজে সফল হতে পারবেন না।
  • সবসময় মোটিভেটেড থাকার জন্য প্রতিদিন মোটিভেশনাল কিছু পড়তে হবে, শুনতে হবে, দেখতে হবে। তাহলেই মস্তিষ্ক সবসময় পজেটিভ থাকবে। আপনি যদি পজেটিভ থাকেন পৃথিবীর কেউ আপনাকে নেগেটিভ করতে পারবে না। তাই মানুষের নেগেটিভ কথাগুলোকে মোটিভেশন হিসেবে গ্রহন করুন। জীবন সহজ হবে, প্রশান্তি আসবে।
  • নিয়মানুবর্তিতাকে আলিঙ্গন করতে হবে। নিয়ম মেনেই কাজ করতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি কি আমার লক্ষ্যে পৌঁচাতে পারবো? সমস্যা কোথায় কোথায় আচে চিহ্নিত করুন। নিজেই সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করুন অবশ্যই পথের দেখা পাবেন।
  • সকালে ঘুম থেকে উটে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলা আমি অবশ্যই আমার কাজে সফল হবো। নিজের লক্ষ্যে অটল থাকবো। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাবো। নিজেকে নিজেই অতিক্রম করবো। এভাবে এগিয়ে যান। নিজেকে নিজেই মোটিভেট করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top