ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির পথ  : কামরান চৌধুরী

লিভার বা যকৃতে চর্বি জমা হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভা­­­র বা হেপাটিক স্টেটোসিস বলে। লিভারে অল্প পরিমাণ চর্বি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে বিভিন্ন রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারের হার ৩৩ শতাংশ, দেশের প্রতি তিনজনের একজনই এই রোগে আক্রান্ত, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হয়। সচেতন থাকতে হবে সবাইকে। পেটের অতিরিক্ত চর্বি তাই অবশ্যই কমিয়ে ফেলতে হবে।

ফ্যাটি লিভার ২ ধরনের- অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার যারা নিয়মিত অ্যালকোহল পান করেন তাদের হয় এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার- যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রয়োজনের অতি­­রিক্ত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত চিনি, কার্বোহাইড্রেট, প্রসেসড ফুড, মুখরোচক খাবার বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার গ্রহণ করে তাদের হয়ে থাকে৷ এ ছাড়াও বিভিন্ন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে, ডায়াবেটিক বা রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা বেশি থাকলে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড থাকলে এবং  নির্দিষ্ট বয়সের পর অনেকে বংশগত কারণেও ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন।

আমাদের দেশের মানুষের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারেন না যে লিভারে ফ্যাট জমলে তা গুরুতর আকার নেয়। ফ্যাটি লিভার থেকে প্রথমে হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ হয়। এরপর তা লিভার সিরোসিসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তবে শুরুতেই ফ্যাটি লিভারের লক্ষণগুলো জানতে পারলে অনেক গুরুতর সমস্যার সমাধান হতে পারে।

আপনি কিভাবে বুঝবেন আপনার ফ্যাটি লিভার হয়েছে? চলুন এর লক্ষণগুলো জেনে নিই-

●  খাবারে অরুচি, ক্ষুধামন্দা

●  ক্লান্তি লাগা, কাজ করতে ইচ্ছে না করা, অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা,

●  পেটের ওপরের ডান দিকে অস্বস্তি বা ব্যথা 

●  হজমে সমস্যা ­­ও অ্যাসিডিটি সমস্যা হতে পারে,

●  খাবার সময় বমি বমি ভাব হতে পারে

●  পেট ফুলে যাওয়া, পেটে গ্যাস হওয়া এবং অন্যান্য অঙ্গও ফুলে যেতে পারে

●  ওজন কমে যাওয়া

●  মাথাব্যথা, ডিপ্রেশন বা মন খারাপ, আচমকা কাঁপুনিও হতে পারে

●  প্রস্রাব গাঢ় হওয়া, ত্বক ও চোখ হলুদ রঙ ধারণ, হালকা রঙের মল

●  পেটে সেদ ভুড়ি ক্রমাগত বাড়তে থাকা, শরীরে চুলকানি

ফ্যাটি লিভার রোগীদের ডায়াবেটিস, কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ, যেমন হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতা, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, কোলন ক্যানসার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক দেখা দিলে বুঝবেন আপনি ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কেননা ফ্যাটি লিভার হলে ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস এবং ফাইব্রোসিসের মতো বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেরও প্রয়োজন হতে পারে।

সুতরাং দেরি না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। ফ্যোটি লিভার হলে আপনাকে নিম্নোক্ত ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে-

● অ্যালকোহল গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে।

● আপনার যদি দুধ চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে বা কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে তৈরি চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সেই অভ্যাস পরিহার করতে হবে। ঘন দুধের তৈরি খাবার বা ফুলক্রিম মিল্ক খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।

● খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখা।

● যেসব খাবারে ফাইবার বেশি  সেটা খাওয়া, যা হজমে সাহায্য করবে, ক্ষুধাটাকে দমিয়ে রাখবে এবং পেট অনেক বেশি সময় ভরা থাকবে৷

● সবজি খেতে হবে বিভিন্ন রঙের। যেমন – বিটরুট, গাজর, শিম, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি ইত্যাদি। এছাড়াও দেশী শাক খেতে পারেন।

●  খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। খাবারে শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। খাসি ও গরুর মাংস কমিয়ে শাকসবজি, ফল ও মাছের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। কোমল পানীয়, ফাস্টফুড পরিহার করুন। 

●  প্রোটিন গ্রহণ কমিয়ে দিতে হবে। মাছ খাবেন কিন্তু চর্বির অংশটি বাদ দিতে হবে। মুরগির মাংস খেতে হলে চামড়া ছাড়িয়ে খেতে হবে৷ গরুর মাংস চর্বি ছাড়া খেতে পারেন, সলিড ১ বা ২ টুকরো মাংস প্রতি বেলা।

● প্রতিদিন একটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া। ডেইরি প্রোডাক্টের এর মধ্যে টক দই, নন ফ্যাট মিল্ক খেতে পারেন।

● দেশীয় মৌসুমী ফল খাদ্যতালিকায় যোগ করুন।

●  খাবারে তেলের ব্যবহার হ্রাস করা। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার কম খাওয়া।

●  উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে অতিরিক্ত চর্বির সঠিক চিকিৎসা নিন।

●  নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

এছাড়া ন্যাচারালি স্পে ড্রাইড বিটরুট জুস পাওডার দিয়ে লিভার ভালো করতে পারেন। বিটে রয়েছে নাইট্রেট যা রক্তে সরাসরি মিশে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে যা লিভারের চর্বিকে ডিটক্সিফাই করে রক্ত কণিকাগুলি প্রসারিত করতে সাহায্য করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ফ্যাটিলিভারকে ভালো করে তুলে।

সচেতন হোন, ভালো ও সুস্থ থাকুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top