সফলতার মূল সূত্র : কামরান চৌধুরী

সফলতা সবার কাছে এক নয়। যাকে অন্যরা আদর্শ হিসেবে মানে, অন্যরা যার মতো হতে চায় তাকেই সফল মানুষ বলে। হুবহু কারো মতো না হয়ে নিজেই এমন কিছু হওয়া যেন মানুষ তখন আপনার মতো হতে চায়। সফল মানুষদের জীবন বিশ্লেষণে কিছু বিষয়ে সবার জীবনে অদ্ভূত মিল দেখা যায়- সময়ানুবর্তিতা, কাজে একনিষ্ঠতা, অধ্যবসায়। যে কোনো পেশায় বা জীবনে সাফলতা এমনিতে আসে না। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করতে হয়। সাফল্য অর্জনের জন্য  সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে পথ চলতে হয়।

প্রত্যেক মানুষ সফল হতে চায়। এটা তার সহজাত প্রবৃত্তি। সফলতার জন্য খুঁজে বেড়ায় নানান পথ। সোজা পথে লক্ষ্যে না পৌঁছলে শটকার্ট খোঁজার অভ্যাস আমাদের মজ্জায়। জীবনে সফল হতে গেলে কিছু সূত্র বা মন্ত্র মেনে চলতেই হবে। সাফল্যর সেই মন্ত্র পথ বা পরামর্শ চলুন অনুসরণ করি-

মনস্থির – সবার আগে স্থির করা ভাল, কী হতে চাই। নিজের লক্ষ্য স্থির থাকলে জীবনের সঠিক চাল দেয়া যায়। পরিকল্পনা মাফিক কাজের প্রতি সময় দেয়া। ক্ষমতা বুঝে বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে চলতে হবে।  কাজ শুরু করাই হল সাফল্যের মূল চাবি।

স্বপ্ন পূরণ : স্বপ্ন সবাই দেখে কিন্তু তা পূরণ করতে কজন পারেন? কজন  স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটে। আপনি স্বপ্ন-বিলাসী, নাকি সফল ব্যক্তিত্ব হতে চান? ঠিক করুন। অন্যের স্বপ্ন নিজে লালন করবেন না বরং নিজেই সফলতার স্বপ্ন দেখতে শিখুন। প্রত্যেকের জীবনেই আলাদা আলাদা স্বপ্ন থাকা উচিত। নিজের জীবন ও স্বপ্ন নিয়ে কখনোই হেলাফেলা করবেন না। আগামী দিনের কাজ আজকে করা আর আজকের কাজ এখনই করা।

পরিশ্রম ও অনুশীলনে জীবন সাজান : একটাই জীবন। এই জীবনকে সাজাতে হবে। পৃথিবীতে পদচিহ্ন রেখে যেতে হবে। আর চিহ্ন রাখতে পরিশ্রম করতেই হবে। কাজ শিখে অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলনই মানুষকে যোগ্য করে তোলে। ধৈয্যশীল হতে হবে, কেননা সফলতা হঠাৎ আসে না। মনে রাখতে হবে- যেখানে পরিশ্রম নেই সেখানে সাফল্য নেই।

প্যাশন ধরে রাখুন– যখন যে কাজ করবেন তা ভালোবেসে করুন। কারণ কাজে বিরক্তি এলে আপনি তাতে সফল হতে পারবেন না। ভালোবেসে পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই জয় করা সম্ভব। তাই কাজে যত্নশীল হোন, কাজে ভালোবাসা ও প্যাশন ধরে রাখুন।

বিশ্বাস : মন থেকে বিশ্বাস করতে হবে- আমি পারবো। ‘মনে মনে প্রতিদিন বলতে হবে ‘আমি বিশ্বাস করি, আমি পারব। আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে অসম্ভব বলে কিছু নেই। অসম্ভব সম্ভব হবে জীবনে। আর জীবনে সফল হতে হলে দুটি জিনিস অবশ্যই প্রয়োজন জেদ আর আত্মবিশ্বাস। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিবেন কিন্তু সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। কোন কাজটা করা ঠিক হবে আর কোনটি ঠিক নয় তা বিবেক কে প্রশ্ন করুন। নিজে যাচাই করে নিন। নিজের মনই সবচেয়ে সঠিক ও কার্যকরী তথ্য দিতে পারবে।

হাল ছেড়ো না- লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে বার বার ব্যর্থ হতে হয়। কিন্তু হতাশা না হয়ে রবার্ট ব্রুশের মতো লড়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের পরিচয়। হাল ছাড়া যাবে না। মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে, কাজে, লক্ষ্যে লেগে থাকতে হবে। হার্ড ওয়ার্কিং এর চেয়ে স্মার্ট ওয়ার্কিং করতে হবে।

পারবই, করবোই, করে দেখাবোই : আমি পারব- না পারার তো কারণ দেখি না- এ মনোবল আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় রাখতে হবে। করব, করেছিলাম, দেখা যাক- এমন সব অতীত, ভবিষ্যতের কথা ত্যাগ করে স্পষ্ট ভাষায় বলুন- আমি করছি, সফলতার জন্যই চেষ্টা করছি, করে যাবো।  সফল হয়ে দেখাবোই। কোনো অজুহাতই আমাকে দমাতে পারবে না।

টাকার পেছনে ছুটবেন না : যদি টাকার পেছনে ছোটেন তবে টাকা হয়তো আসবে, কিন্তু চলে যাবে জীবনের অনেক মূল্যবান সময়। কাজের পেছনে ছুটুন টাকা আপনাআপনিই চলে আসবে। অতিরিক্ত খরচের অভ্যাস বাদ দিন। পরিমিত জীবনবোধই সুন্দরভাবে বাঁচতে সাহায্য করে।

অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন: জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখবেন, তার সবই কোনো না কোনোভাবে সাফল্যের নেপথ্যে রসদ জোগাবে। অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলো দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত ও সমৃদ্ধ করবে। অন্যের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। তাই পেশা জীবনকে মনে করতে হবে ধারাবাহিক অভিজ্ঞতার সমষ্টি।

দ্রুত নিজেকে প্রমাণ করুন: কর্মস্থলে যোগ দিয়ে যত দ্রুত নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিবেন, সার্বিক পেশাজীবন তত গতিময় ও সমৃদ্ধ হবে। ধীরে-সুস্থে এগোনো যাবে, এমন ভাবলে ভুল করবেন। বরং প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজের গুরুত্ব তুলে ধরুন। এতে আপনার বেতন ও পদমর্যাদার উন্নতি হবে এবং বড় পরিসরের দায়িত্বও দেওয়া হবে।

ঝুঁকি নিয়ে কাজ করুন: জীবনে ও কাজে ঝুঁকি নিতে হবে। গতকাল যা করেছি, আজ ও আগামীকাল যদি সেই একই কাজ করে যেতে থাকি, আমরা এগোতে পারব না। ঝুঁকি নিতে হবে পরিবর্তনের জন্য যেখানে সাফল্য ও ব্যর্থতা-দুটোই থাকতে পারে। উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকিই হতে পারে আপনার বড় সাফল্যের সিঁড়ি।

ইতিবাচক মনোভাব রাখতে হবে যা আপনাকে সাফল্যের দিকে টানবে। ইতিবাচক মনোভাব হলো আশা, সৃজনশীলতা ও প্রাপ্তির সীমাহীন সম্ভাবনা। চলার পথে বাধা আসতেই পারে সে বাধাগুলো দূর করার উপায় বের করুন।

যোগাযোগ– বর্তমান যুগ নেটওয়ার্কিং এর যুগ। মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে। বেঁচে থাকা, চলাফেরা, কর্ম, সফলতা সব ক্ষেত্রে সুযোগাযোগ প্রভাবিত করছে। অন্যের সাথে ইতিবাচক আলোচনা, কথা বার্তায় সহজ সরল ভাষা ব্যবহার, অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি বা প্রশংসা, কথায় ও কাজে মিল রাখা, মানুষের সাথে মেশা তাদেরকে জানা। মানুষের সঠিক মূল্যায়ন, মোটিভেশন ইত্যাদি চর্চায় যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

আগামীর প্রয়োজনে আত্মত্যাগ: ভবিষ্যতে নিজেকে ভালো অবস্থানে দেখতে চাইলে এখন কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কাজটা পছন্দের হলে তাতে বেশি সময় দিতে ক্ষতি কী। পেশা জীবনের শুরুতে যত পরিশ্রম করবেন, পরবর্তী জীবনে তার সুফল তত বেশি পাবেন। আর তখন সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানোর পর ধন্যবাদটা আপনি নিজেকেই দিতে পারবেন, অন্য কাউকে নয়।

ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি : নিজের সব অর্জন ও অভিজ্ঞতার তথ্য এক জায়গায় রাখতে হবে। নিজ নামের শেষে ডট কম যুক্ত করে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট তৈরি করুন, হালনাগাদ করুন। এতে নিজের কাজকর্ম সহজেই অন্যদের জানাতে পারবেন। এভাবে নতুন নতুন কাজ ও উদ্যোগের সুযোগ অবারিত হয়। ফেসবুক, লিংকডইনসহ সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমগুলোতেও নিজের প্রোফাইল হালনাগাদ রাখা উচিত।

বেশি বেশি ঘুরে বেড়ান: অন্যদের সংস্কৃতি, ভাষা ও কাজের ধরন সম্পর্কে জানতে হলে বেশি বেশি ঘুরুন, বিভিন্ন অফিসে কাজ করুন। এখন আমরা বৈশ্বিক বাজারব্যবস্থার মধ্যে কাজ করি। প্রতিষ্ঠানগুলো সেরা কর্মীকে খুঁজে নিতে চায়। যত বেশি ভ্রমণ করবেন, বিশ্ব সম্পর্কে, কর্ম পরিবেশ সম্পর্কে তত বেশি বাস্তব অভিজ্ঞতার অধিকারী হবেন। একাধিক বিদেশি ভাষা জানলে প্রতিষ্ঠানে আপনার চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে যাবে।

সঠিক নেতা বাছাই : পেশা জীবনে একজন যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তির অধীনে কাজ করা ভালো। সঠিক ব্যক্তিটিকে বাছাই করুন, যিনি আপনাকে সমর্থন, উৎসাহ ও সময় দিবেন। আপনি তাঁর অবস্থানে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখবেন এবং তাঁর পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা আপনার কাজে লাগবে। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনাগুলো তাঁর সঙ্গে বিনিময় করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top