অপমান একটি খারাপ আচরণ। যা দিয়ে মানুষ মানুষকে হেয়, তুচ্ছ, ছোট করার চেষ্টা করে। অপমানের ফলে কারো আত্মসম্মানকে মেরে ফেলা যায়, অন্যদিকে যে বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে সে বিষয়ে লজ্জা দেয়া। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে অপমান করে। অনেকেই নিজের স্বার্থ রক্ষায় করে, অনেকে খামাখা অপমান করে আনন্দ পায়। প্রায় সব মানুষকেই জীবনে কোনো না কোনো সময়ে অসম্মান বা অপমানের মুখোমুখি হতে হয়। এজন্য তাকে কাছের মানুষ বা অন্যদের থেকে শুনতে হয় নানা নেতিবাচক কথা, মন্তব্য। অপমান হজম করা সহজ নয় আবার অপমানের সঠিক জবাব সবসময় দেয়া যায় না। অপমানের ফলে অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠেন। কেউ অপমান করলে মাথা গরম হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে ঝগড়া, তর্ক করে কোনও লাভ হয় না। বরং সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙবে না, এমন পন্থা বের করতে হবে। তাই সঠিক উপায়ে অপমানের জবাব দিতে জানা জরুরি।
এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন? চলুন জেনে কিই প্রয়োজনীয় কিছু কৌশল-
* অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনাগুলো ঝেড়ে ফেলুন। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অস্বস্তিকর পরিবেশ সহজেই মোকাবিলা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিজেকে অবশ্যই শান্ত, স্থির ও আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। কখনো রাগ করবেন না, কারণ রাগ করলে মানুষের নিজেরই ক্ষতি হয় বেশি।
* কারো নেতিবাচক মন্তব্যে সাথে সাথে রেগে যাবেন না। তাঁর কথায় আহত হয়েছেন বা হতাশ হয়েছেন সেটা তাঁকে বুঝতে দেবেন না। শান্ত ও সংযত থাকুন। প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে কিছু সময় নিন।
* পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ দিন
কেউ আপনার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়ে দিলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না; বরং মন্তব্যকারীকে তাঁর কথার পুনরাবৃত্তি করতে বলুন। এমনটা করলে মন্তব্যকারী কিছুটা ভড়কে যাবেন এবং নিজের ভেতরে একধরনের অস্বস্তি বোধ করবেন। এতে তাঁর বলা কথাটা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবেন। সেই সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা থেকে বিরত হবেন।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন
- কোনো ব্যক্তি আপনাকে অপমান করছে মানে তাঁর নিরাপত্তাহীনতাই প্রকাশ করছে। মনে রাখবেন, লোকে যা বলবে, আপনি তা নন। তাই নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, মনোযোগ দিন নিজের শক্তির ওপর, কাজের ওপর। যাঁরা আপনাকে সমর্থন করে তাদের সাথে মিশুন এবং যথাযথ মূল্যায়ন করেন। আপনার দৃঢ় মানসিকতা অন্যের কটূক্তিকে হাওয়ায় মিলিয়ে দিতে পারে।
- অপমানজনক কোনো কথার জবাব যদি দিতেই চান, তাহলে মাথা ঠান্ডা রাখুন। মোটেও রেগে যাবেন না। জবাব দিন শান্ত থেকে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। দৃঢ়ভাবে যদি তাঁকে বলতে পারেন, ‘আপনি যা বললেন, সেটা কিন্তু আমার ভালো লাগেনি।’ তাহলে দেখবেন আপনাদের পরবর্তী কথাবার্তায় শ্রদ্ধা থাকবে। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে না।
- কেউ বারবার অপমান করলে সরাসরি জিজ্ঞেস করুন, ‘আপনি কি আমাকে অপমান করার চেষ্টা করছেন?’ এতে দেখবেন, অপর পক্ষ দমে যাবে। দ্বিতীয়বার আক্রমণ করতে ভাববে, বা নিজের বলা কথা ফিরিয়ে নেবে। পাশাপাশি কথোপকথনের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে চলে আসবে।
- যে অপমান করছে তার সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন, সেটা ভাবুন। তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন, যোগাযোগ কমিয়ে দেয়া উত্তম সিদ্ধান্ত । নিজে ভালো থাকার ব্যাপারটা প্রথমে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য তাঁদের সঙ্গেই মিশুন, যাঁরা আপনার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করেন।
- কোনো ব্যক্তি যদি বারবার অপমান করতে থাকে, তাহলে তাঁকে সাফ সাফ বলে দিন, ‘আপনার আচার–আচরণ আমার ভালো লাগছে না।’আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলুন আপনি সম্মানজনক আচরণ আশা করেন।
- কিছু মানুষ আছে যারা অকারণে কাউকে অপমান করে, এদেরকে এড়িয়ে চলুন। আসলে এরচেয়ে উত্তম জবাব আর নেই।
- যে জন্য অপমানিত হয়েছেন, সেই দিকে আরো নিজেকে বড়ো করুন। কোন কিছুর দুর্বলতা বা ঘটাতির অপমানের জবাব হিসেবে দুর্বল জায়গায় নিজের উন্নতি ঘটান। তাৎক্ষণিক জবাব না হলেও কিছু সময় পরে হলেও দিয়ে দিন। এমন জায়গায় নিজেকে নিয়ে যান যেখানে দেখলে অপমান কারি নিজেই লজ্জা পাবে। তার থেকে বড়ো জবাব আর হয় না।
- অর্থ সম্পদ কম থাকার কারণে কেউ অপমান করলে চুরি ডাকাতি, দুর্নীতি করে টাকা বৃদ্ধি না করে পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ বৃদ্ধি করুন। তেমনি কোনো খারাপ অভ্যাসের কারণে অপমান করলে, সে অভ্যেস ত্যাগ করে জবাব দিয়ে দিন।
- আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প বৃদ্ধি করুন। এতে ভবিষ্যতে অপমান বা খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে আরও ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।
- যে ব্যক্তি অপমান করে, তিনি সামনের মানুষের মনোবল ভেঙে দিতে চান, অপমানিত ব্যক্তির থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও আশা করেন, যাতে আরও কথা শোনাতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে অপমানের প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নিন। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া না পেয়ে এমনিতেই ঘাবড়ে যাবেন অপমানকারী ব্যক্তিটি।
- মুখে কিছু না বলে অপমানকারী ব্যক্তির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকুন, নিরীক্ষণ করুন। আপনার এই নীরবতা এবং স্থির দৃষ্টিই তাঁকে দ্বিতীয় বার ভাবতে বাধ্য করবে।
- বোবার কোনও শত্রু নেই প্রবাদটি মনে রাখবেন। অপমানের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। সামনের জন যতই অপমান করুন না কেন, নির্বিকার থাকার চেষ্টা করুন। নিজের কাজ করে যান, অপমানের জবাব না দেওয়াই ভাল।
- অজানা-অচেনা কেউ ব্যক্তি যদি অপমান করেন, সেক্ষেত্রে তাঁকে নাম, পরিচয় জানতে চান। তার পর বাক্যবাণ চালিয়ে যেতে বলুন। এতে সামনের জন ঘাবড়ে যাবেন।
- অপমান গায়ে না মেখে, হেসে উড়িয়ে দিতে পারলে আর কোনও প্রশ্নই থাকে না। অপমান, নিন্দাকে গঠনমূলক সমালোচনা হিসেবে দেখতে শুরু করুন। এতে মানসিক শান্তি আসবে।
- হাস্যরসের মধ্যমে কারো অপমানের জবাব দেওয়া সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি। তাই যখন কেউ আপনাকে নিয়ে মজা করে, আপনিও তার সাথে মজা করার চেষ্টা করুন।
কাউকে অপমান করতে কোনো যোগ্যতা লাগে না , কিন্তু কাউকে সম্মান করতে গেলে যোগ্যতা ও শিক্ষার প্রয়োজন। অন্যায়ের দ্বারা অপমানিত হলে, এর মুখোমুখি হোন, এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং আপনার অধিকার ও ন্যায়বিচারের দাবি করুন। কেউ অপমান করলে কি করতে হবে কৌশলগুলো জানা থাকলে এরকম পরিস্থিতি আপনিও ভালোভাবে সামাল দিতে পারবেন।