সুন্দর এই পৃথিবীতে সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকা বড় নেয়ামত। বেশি দিন বাঁচতে কে না চায়? আর সেই বাঁচা যেন হয় সুস্থতায়। আমাদের দেশে মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। কিন্তু একটু নিয়ম মেনে চললে ৮০-৯০ বা ১০০ বছরের কাছাকাছি বাঁচা সম্ভব। সুস্থ জীবনযাপন বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রত্যহ শারীরিক ব্যায়াম ও মনোচাপ থেকে মুক্তিতে আয়ু বাড়ে। এছাড়াও কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আছে যার মাধ্যমে খুব সহজেই স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়। সুস্থ থাকতে ও দীর্ঘায়ু পেতে উপায়সমূহ চলুন জেনে নিই:
ব্যয়াম করুন- নিয়মিত ব্যায়ামে বার্ধক্য-প্রক্রিয়ার গতি কমানো যায়। আয়ু বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। এমন ব্যায়াম করতে হবে যাতে হৃৎস্পন্দন এবং শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বাড়বে। এতে করে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও পেশির সক্ষমতা বাড়ে। যার ফলে ডায়াবেটিস, স্থূলতা থেকে দূরে থাকা যায় এবং আয়ু বাড়ে। প্রতিদিন হাঁটুন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট।
ওজন বাড়তে দেবেন না। সহজ হিসাব হলো, সেন্টিমিটারে উচ্চতা বের করে ১০০ বিয়োগ করলে প্রাপ্ত সংখ্যাটিই হবে আপনার আদর্শ ওজন। পাশাপাশি পেটের পরিসীমা বা (ভুঁড়ির বেড়) যেন উচ্চতার অর্ধেকের বেশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।
দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকুন। দুশ্চিন্তা দেহে কর্টিসল হরমোন নিঃসৃত করে যা ওজনাধিক্য বাড়ায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ও অল্প বয়সে মৃত্যু ঘটে। মানসিক চাপে থাকলে বা রেগে গেলে, শরীরে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা, আপনার হৃদযন্ত্র, মেটাবলিজম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই পছন্দের কাজে ব্যস্ত থাকুন, চাপ মুক্ত থাকুন।
একটু বেশি হাসুন- হাসি আমাদের আয়ু বাড়াতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত যে- হাসিতে মানুষ দীর্ঘায়ু পায়। হাসলে এনডরফিনস ও সেরোটোনিনের মতো সুখ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা প্রদাহ ও ব্যথা ভুলিয়ে দেয় প্রাকৃতিকভাবেই। শুধু তা-ই নয়, হাসি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শক্তিশালী করে দেহের ক্ষমতাকে।
প্রতিদিন অন্তত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমান। দুপুরে অন্তত ১৫-২০ মিনিটের হালকা ঘুম খুব উপকারী। এতে আয়ু বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা দুপুরে ১৫-২০ মিনিট ঘুমান তাদের হৃদরোগ, ক্যান্সার বা স্ট্রোক হবার ঝুঁকি খুবই কম।
নিজেকে কিছুটা সময় দিন- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নিজেকে একটু দম দেওয়া উচিত। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা ছুটি নিন, প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজের সঙ্গে কাটান। মাথার সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আবেগ দূর করুন। এতে চিন্তা ও চাপমুক্তি হবে। এতে হৃৎস্পন্দন কিছুটা কমবে এবং মনোযোগ বাড়বে।
প্রকৃতির সংস্পর্শে যান- মনের চাপ কমাতে কিছু সময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটান। এতে রক্তচাপ কমবে ও মন ভালো হবে। নির্মল প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ালে মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়। যা বিষণ্নতা দূর করে, সিজোফ্রেনিয়ার মতো সমস্যাও দূর করে।
স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিপূর্ণ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে যোগ করতে হবে। রঙিন শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাওয়া যায়। তাই চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত মৌসুমি ফল ও শাকসবজি খাওয়ার। অতিভোজন করবেন না। কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।
সিগারেট পান একদম করবেন না। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের ক্যানসার, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বাড়ে এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এছাড়া শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই যে ধূমপানে শরীরের ক্ষতি হয় না। ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের ধূমপান ছাড়ার বছর দুয়েকের মধ্যে হৃদরোগের আশঙ্কা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে, ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত ক্যানসারের আশঙ্কা প্রতিবছর কমতে থাকে। ১৫ বছরের মধ্যে ধূমপানের সব ধরনের ক্ষতি দূর হয়ে যায়। সুতরাং আজই ধূমপান বাদ দিন।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বিশ্বস্ত কিছু মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এতে করে আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া ভালো বা খারাপ ঘটনাগুলো কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন। যা জীবনে শান্তি আনতে পারে।
জীবন-মৃত্যু নির্ধারিত। প্রত্যেক মানুষ তার নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করবে। কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে, যে কাজগুলো করলে আল্লাহ তাআলা তার হায়াত বৃদ্ধি করে দেন। ইসলামী বিধান অনুসারে, কোনো মুসলমানের জন্য স্বাভাবিকভাবে হায়াত বৃদ্ধির দোয়া করা শরিয়তসম্মত। হাদিসে আছে- নেক আমল বা দোয়ার দ্বারা আল্লাহর পক্ষ থেকে হায়াত বাড়ে। হায়াত বৃদ্ধি বলতে মহান আল্লাহ তাকে এমন কাজ করার তাওফিক দান করবেন, যা মানুষ যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে। সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া অন্য কোনো কিছু ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো কিছু হায়াত বাড়াতে পারে না’। (তিরমিজি, হাদিস : ২১৩৯)। বুখারি হাদিস রয়েছে- ‘যে ব্যক্তি চায় যে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বর্ধিত হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে’। অপর এক হাদিসে রয়েছে- আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা, চরিত্র সুন্দর করা এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার রাখায় দেশ আবাদ থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়।
দীর্ঘমেয়াদে আপনার স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান উন্নত করতে পারেন। নিয়মিত চিকিৎসাগত পরীক্ষা করান। লেখালেখি করুন, ধ্যান করুন যা, মানসিক চাপ দূর করার সবথেকে ভাল উপায়। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটের ধ্যানই আপনার মস্তিষ্ককে উদ্বেগ এবং উত্তেজনা থেকে প্রয়োজনীয় মুক্তি দিতে পারে।