বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয় ক্যান্সার প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম এবং ক্যান্সার চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে দিতে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০২৫-২০২৭ বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের থিম হল ‘ইউনাইটেড বাই ইউনিক” অর্থাৎ স্বকীয়তার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হই। এই থিমটি প্রতিটি ব্যক্তির অনন্য চাহিদা পূরণের জন্য ব্যক্তিগত যত্ন এবং চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরে। বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালন শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। ফ্রান্সের প্যারিসে ‘ওয়ার্ল্ড সামিট এগেইনস্ট ক্যানসার’-এর মঞ্চ থেকে এ প্রচেষ্টা শুরু হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, রোগের মধ্যে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ ক্যানসার। প্রতিবছর প্রায় এক কোটি মানুষ এতে মারা যায় ।  দেশে প্রতি লাখে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৬ জন। এছাড়াও প্রতি বছর নতুন করে ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছেন ৫৩ জন। মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশই ক্যানসারের রোগী। দেশে থাকা ৩৮ ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালি এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ রোগীর বয়স ১৮ থেকে ৭৫ বছর। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু এবং ৫ দশমিক ১ শতাংশ রোগীর বয়স ৭৫ বছরের বেশি।’

গবেষণায় দেখা যায় ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো- স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার। পুরুষদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো- শ্বাসনালী, পাকস্থলী, ফুসফুস, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার। নারীদের ৫টি প্রধান ক্যান্সার হলো- স্তন, জরায়ুমুখ, মুখ, থাইরয়েড এবং ওভারি। পুরুষ ক্যান্সার রোগীদের ৭৫.৮ শতাংশ ধূমপায়ী এবং ধোঁয়াহীন পান, জর্দা, তামাক সেবনকারী ৪০.৫ শতাংশ। ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ৬০.৬ শতাংশ নারী ধোঁয়াহীন পান, জর্দা, তামাক সেবনকারী। ৪৬ শতাংশ রোগীর ক্যান্সারের সাথে ই-তামাক সেবনের সম্পর্ক রয়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমবাইন্ড চিকিৎসা নিয়েছে এবং ৭.৪ শতাংশ রোগী কোন চিকিৎসাই নেয়নি। ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং একের অধিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও এলায়েড হেলথ ওয়ার্কারের সাহায্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্পন্ন করতে হয়। সে কারণে ক্যান্সার প্রতিরোধে জোর দিতে পারলে রোগের বার্ডেন অনেক কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়।

বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি আমরা ঝুঁকিপূর্ণ উপাদানগুলো এড়িয়ে চলি এবং প্রমাণিত প্রতিরোধ কৌশলগুলো অনুসরণ করি। পান-জর্দা-তামাকপাতা খাওয়া, সবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, শারীরিক ব্যয়াম না করা, শারীরিক স্থূলতা বা বেশি ওজন, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্স-রে রেডিয়েশন, কিছু রাসায়নিক পদার্থ, কিছু ভাইরাস বা অন্যান্য জীবাণু অন্যতম। সচেতনতা এবং সুষ্ঠু জীবনযাত্রা দিয়ে একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে ঠেকিয়ে রাখা যায় এ মরণরোগ। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সহজ হয়। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, যেমন HPV ভ্যাকসিন যা গর্ভাশয়ের ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক, এবং হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন যা যকৃতের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে পারে।

ক্যান্সার মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে একযোগে কাজ করতে হবে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top