Tree of Life : জীবন বৃক্ষ : কামরান চৌধুরী

পৃথিবীতে আমরা সবাই ইউনিক হয়েই জন্ম গ্রহণ করেছি। কারো সাথে কারো মিল নেই। আমাদের জীবন এক বৃক্ষের মত। প্রতিটি রাষ্ট্রের USP (Universal Seling Poeposition) রয়েছে. আমরা যুক্তরাষ্ট্রের USP দেখতে পাই লিবার্টি, ফ্রিডম, কমফোর্ট ফর দি সিটিজেন, যুক্তরাজ্যের USP  দেখতে পাই রয়্যালটি, সুপ্রিমেসি অব দ্য কুইন, জাপানের USP টেকনোলজি, মধ্যপ্রাচ্যে তেল।  ইন্ডিয়ার বলিউড, ক্রিকেট, হিমালয় পর্বতমালা, স্পিরিচুয়ালিটি। ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনার ইকোলজি ঠিক করার জন্য সারা বিশ্বের মানুষ আসে ভারতবর্ষে। বাংলাদেশের মানুষেরও রয়েছে USP- বাঙালি অতিথি পরায়ণ, ভাষার জন্য প্রাণ দান, স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী জাতি, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ইউএসপি হলো কিভাবে বিশ্বে আলাদা করতে পারি?

          একটি সুন্দর বৃক্ষের তিনটি অংশ থাকে Roots, Trunk, Crown,। বৃক্ষের অত্যাবশ্যকীয় অংশ হলো শিকড়। সবল বৃক্ষের সবল শিকড় থাকে। শিকড় যদি শক্ত মজবুত থাকে তখন বৃক্ষও সবল শক্তিশালি থাকে। শিকড় যত গভীরে যাবে, যত শক্তিশালি হবে সে গাছকে তত শক্তিশাল করবে। সকল ধরণের সাইক্লোন, ঝড়, ঘুর্ণিঝড়, হারিকেন, টর্নেডো থেকে রক্ষা করে। সেই শিকড় আমাদের চোখে দৃশ্যমান নয়। এই শিকড়কে তুলনা করা হয় আমাদের স্পিরিচুয়ালিটি এর সাথে। আমাদের অর্জন মানুস দেখাতে পায়, টাকা, সম্পদ, গেজেট, সাহস, সাফল্য মানুষ দেখতে পায় কিন্তু আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয় না আমাদের শিকড় সাদৃশ্য স্পিরিচুয়ালিটি। তাই আমাদেরকে কাজ করতে হবে যা অদৃশ্যমান সেটা নিয়ে। তা হলেই আমরা সাসটেইন করতে পারবো।

          অনেক মানুষ আছে যাদের বাড়ি, গাড়ি, অর্থ-সম্পদের প্রাচুয্য রয়েছে যা আমরা দেখতে পাই কিন্তু তার মনের মাঝের দুঃখকে দেখতে পাই না। সারা বিশ্ব দেখছে তার সম্পদ, সাফল্য, অর্জন, জনপ্রিয়তা কিন্তু দেখতে পায় না তার মানষিক দৈনতা, দুঃখ, অসহনীয় কষ্ট। গাছের ট্রাস্ক আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়। গাছের শাখা প্রশাখা আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয় কিন্তু শিকড় অদৃশ্য থেকে যায় মাটির নিচে। এই শিকড় হলো আমাদের ইনার ডেভেলপমেন্ট, স্পিরিচুয়াল ডেভেলপমেন্ট। আমরা যদি আমাদের স্পিরিচুয়াল ডেভেলপমেন্ট শক্তিশালি করতে পারি তাহলে জীবনে আসা সকল সমস্যা ঝড়, ঘুর্ণিঝড়, সাইক্লোন, টর্নেডোর মতো  আমাদেরকে ক্ষতি করতে পারবে না। শক্তিশালি গাছ ঝড়ে একটু হেলে যায়, নড়াচড়া করে কিন্তু ভেঙ্গে পড়ে না।

          কিছু মানুষ রয়েছে এতোই দরিদ্র, এতোই  দরিদ্র যে তাদের কাছে মূল্য শুধুই টাকা। যদি তুমি জানতে পারো তুমি কত ধনী তখন তুমি গণনা করতে পারবে, বুঝতে পারবে তোমার যা আছে, সকল বিষয়কে টাকা দিয়ে কেনা যায় না। বলতে চাই না যে, টাকা-অর্থ, সম্পদ খারাপ, তাদের কাছে যা আছে সবই টাকা।   

          আমরা ধর্মের প্রতি অধিকাংশ মানুষই অনুরাগি। স্রষ্টার কাছে আমরা প্রার্থনা করি আমাদের অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও। টাকা দিয়ে জীবনের সব কিছুতে কানেক্ট করা যায় না। তাই আমাদেরকে শিকড়ের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। শিকড় শক্তিশালী হয় কানেকশনের মাধ্যমে। কানেকশন টু আওয়ার ওন সেলফ, কানেকশন টু আওয়ার ডেভেনিটি,- এগুলো হলো মেডিটেশন, ইয়োগা, প্রার্থনা, ঈশ্বরের গুণকীর্তণ ইত্যাদি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এগুলো মানুষের শিকড়কে মজবুত করে যার ফলে একটি বৃক্ষ সুন্দরভাবে দাড়িয়ে থাকে।

          এরপর আমরা দেখতে পাই একটি বৃক্ষের দ্বিতীয় অংশ ট্রাস্ক বা কাণ্ড হলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। কান্ড শক্তিশালি হবে তখনই যখন শিড়ক মজবুত ও গভীরে যায়। শিকড় যদি গভীরে না যায় তবে গাছ একটু বাতাসে নড়তে থাকে। ঝড়ে উপড়ে পড়ে, ডালপালা ভেঙ্গে যায়।

          পারিবারিক ও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সেখানে বিভিন্ন কথা বিভিন্নজন বলে থাকে। কিছু কথা মানুষকে আঘাত দেয়, কিছু কথা মানুষকে আনন্দ দেয়। ইমোশনাল স্টেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষ সেই আঘাতের কথায় রাতে ঘুমাতে পারে না দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। কখনো আপনার ইমোশনের রিমুট কন্ট্রোল অন্যের হাতে দিবেন না। সেই ব্যক্তি রিমুট কন্ট্রোলের বাটন প্রেস করে আমাকে চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিবে। আমাকে আঘাত দিবে, ব্যথা দিবে। সে যদি বলে আমি খুব ভালো, মহৎ তখনই আমি ভালো হয়ে গেলাম মহৎ হয়ে গেলাম? যদি সে বলে খারাপ, তাহলে আমি খারাপ হয়ে গেলাম? অন্যের কথায় প্রভাবিত কেন হবো আমরা? কেউ একজন অনুভব করছে বা তার কাছে মনে হলো আমি খারাপ তার মনে হওয়াতে আমি খারাপ হয়ে গেলাম? কেউ মনে করলো আমি ভালো তার এই মনে করাতে আমি ভালো হয়ে গেলাম? আমার জীবন কতো সংকীর্ণ, আমার নিজস্ব কোন গার্ডস নেই নিজেকে প্রতিরোধ করার, সুরক্ষিত করার। আমার ইমোশন আমার হাতেই রয়েছে। আমাদের শিখতে হবে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আমাদের অনুভূতিকে। আমি কাউকে অনুমতি দিব না আমার মন নিয়ে খেলার জন্য। সে ভালো বা খারাপ বললেই আামি ভালো বা খারাপ হয়ে যাবো। কেউ আমাকে ভালো বলছে সেটা ভালো। এপ্রিসিয়েশন ভালো। কিন্তু কেউ যদি আমাকে আঘাত করে ফেলে, আমাকে আঘাত করে ধ্বংস করতে চায়, ভাবুন এটা তাদের মনোভাব, তারা সেটা চিন্তা করছে। বৃক্ষের ট্রান্ক হলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্ট্যাাবিলিটি।

          বৃক্ষের তৃতীয় অংশ হলো ক্রাউন। যেটা হলো আমাদের পৃথিবীতে অবদান। ক্রাউন যেখানে পাতা, ফুল, ফল থাকে। এই ফল অন্যের জন্য। ফুল অন্যের জন্য। পাতা অন্যের জন্য। গাছের ছায়া অন্যের জন্য। শাখা প্রশাখা মানুষের জন্য, পশু পাখির জন্য। সুতরাং আমাদের কন্ট্রিবিউশন অন্যের জন্য।

          অনেক মানুষ ভাবে জীবন হলো একটি আইসক্রিমের মতো। এটা ইনজয় করতে হবে গলে যাবার পূর্বে বা মারা যাবার পূর্বে। আমি মনে করি জীবন হলো এক মোমবাতি। গলে যাবার পূর্বে অন্যকে আলোকিত করে যাও। আইসক্রিমও গলে যায়- মোমবাতিও গলে যায়। এদুটোর মাঝে আইডিওলজি হলো আইসক্রিম গলে যাবার মাঝে  সেলফিস ইনজয়মেন্ট রয়েছে। অন্যদিকে মোমবাতি গলে যাবার আইডিওলজি  হলো সেলফলেস কন্ট্রিবিউশন সার্ভিস টু আদারস। এ থেকে আমাদের সকলকে অবশ্যই শিক্ষা নিতে হবে আমি অবশ্যই অবদান রাখবো গাছের ক্রাউন বা উপরের অংশের মতো।

          একটা কথা মনে রাখতে হবে যদি আমাদের কাছে টাকা না থাকে তবে অন্যকে সাহায্য করতে পারবো না। যদি আমি ভালোবাসা অনুভব না করি তবে অন্যদের মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারবো না। যদি আমি আশায় বাঁচতে না পারি, মনের মাঝে আশা না থাকে তবে অন্যকে আশায় উজ্জিবিত করতে পারবো না। যদি উপরে উঠতে না পারি তবে অন্যকে উপরে উঠাতে পারবো না। তাই প্রথমে সেলফিস হতে হবে নিজের প্রতি। নিজের যত্ন নিতে হবে। যত্ন নিতে হবে নিজের শিকড়ের প্রতি, নিজের শরীরের ও মানসিক অবস্থার প্রতি। কারণ এই শিকড় এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা গাছের ক্রাউন বা সুন্দর জীবন উপহার দিতে পারে। অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ালেই মানুষের চোখে স্মার্ট হওয়া যায়। আমরা নিজেকে সুন্দর বলি সেটা আমার কৃতিত্ব নয় সেটা ঈশ্বর আমাকে দান করেছে। জীবন যদি সুন্দর ভাবে যাপন কর তবে তা হলো ঈশ্বরকে দেয়া তোমার উপহার। স্মার্টনেস মানুষের সুন্দয্যের উপর নির্ভর করে না, মানুষ কতটুকু অবদান রাখলো তার উপর নির্ভর করে।

সুতরাং একটি গাছে তিনটি অংশ- শিকড়, কাণ্ড ও শাখাপ্রশাখা পাতা। রুটস- আনসিন দ্যা ওয়ার্ল্ড যা গভীর সংযোগ স্রস্টার সাথে, স্বর্গীয় অনুভূতির সাথে – সেটা কি?  সেটা হলো আমাদের প্রার্থনা, মেডিটেশন, ইয়োগা, স্পিরিচুয়াল প্রাকটিস। ট্রাঙ্ক- হলো কাল্টিভেশন বা প্রাকটিস শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য। নিজের অনুভূতিকে নিয়ে খেলা করার রিমুট কন্ট্রোল কাউকে না দেয়া, কাউকে অনুমতি বা সুযোগ না দেয়া নিজেকে আঘাত করার। শেষ অংশ হলো ক্রাউন হলো আমাদের কন্ট্রিবিউশন। অন্যকে দাও ফিরে পাবে শতভাগ। সেন্স অব পারপাস, পারপাস অব লাইফ। তাই Tree of Life হলো তিনটি বিষয় কানেকশন-কাল্টিভেশন-কন্ট্রিবিউশন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top